ঘড়ির কাটাটা এখন বড্ড বেশী সময় নিয়ে ঘুড়ছে.. কাটতেই চাচ্ছেনা সময়.. সমস্ত রাতটুকু জুড়েই এক ধরনের অস্থিরতা .. বাকি রাতটুকু কখন পোহাবে.. কখন সকাল হবে... কখন দশটা বাজবে... উফ্ .. কতক্ষন না দেখে কাটানো যায়? ত্বাবীব একা একাই বির বির করে সারা ঘর পায়চারী করতেছে... ক্যামন যে লাগতেছে। মাথার উপর ফ্যানটাও ঠিক মতো ঘুরতেছেনা... কি দরকার ছিলো রাত তৈরী করার? জীবনে রাত না থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো? যত্তোসব.. এত্তক্ষন না দেখে থাকা যায়?
ত্বাবীব এবং অহনা একি বিশ্ববিদ্যালয়ের একি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে। যেদিন অহনাকে প্রথম দেখে কতক্ষন যে স্টাচুর মতো দাড়িয়ে ছিল বলতে পারবে না। বুকের ভেতরটা ক্যামন যেন একটা শিহরন বয়ে গিয়েছিল.. মাথা কাজ করছিলোনা.. রাতের নিস্তব্দতা ভেঙ্গে দুরের মসজীদে মুয়াজ্জিনের ভারাট কণ্ঠে চমকিত হয় ... "আচ্ছালাতু খাইরুম্মিনান্নাউম".. ত্বাবীব শুয়ে পরে... বিছানায় এপাশ ওপাশ... রাত্রীর শেষমুহুর্তে একটু চোখটা বুজে নেয়া দরকার.. নাহলে চোখের নিচে কালো দাগ পরবে...
ঘড়িটা অনেক্ষন চিৎকার করতেছে। ঘুম ভাঙানির যন্ত্রটার যে এত্ত বিশ্রী শব্দ হয় আগে ধারণা ছিল না। পৃথীবিতে এত্ত সুন্দর সুন্দর শব্দ থাকতে ক্যা কু ক্যা কু শব্দ কে যে এইটার ভিতর ইনস্টল করছে গড নোজ। বেটারে সামনে পাইলে সারাদিন কান ধরে উঠবস করাইতাম।
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসে ত্বাবীব.. ৯টা.. মাই গড। দ্রুত শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হতে হতে পাঁচবার আয়নায় চোখ বুলানো হলো। ড্রেস কি 'সোল ড্যান্স' চলবে? নাকি 'আর্টিস্টি' মারবো? উফ ছোট বোনটা বাসায় থাকলে ওই সব গুছিয়ে দিত। ক্যান যে ওকে বিয়ে দেয়া হলো!!!!
দুইটা ব্রেড দু হাতে নিয়ে ছুটছে ত্বাবীব। শালা... রাস্তায় কোন রিক্সাও নেই আজ.. স্কুটার ওয়ালা সিট এর উপরে পা তুলে আয়েশ করে বিড়ি টানতেছে। মতলব ভালোনা। দিগুন ভাড়া অফার করেও রাজী করানো গেলনা।
এখনো আসছেনা ক্যান? এতক্ষন লাগে? কাটায় কাটায় ১০টা... বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় অস্থির পায়চারী.. রিক্সাওয়ালাগুলোও যেন আজ বেয়ারা হয়ে গেছে... বার বার গায়ের উপর এসে পরছে... মেজাজটা খিচরে যাচ্ছে.. .. বার বার হাতের মুঠি বন্ধ আর খোলা.. আজ কোনা ভাবেই রাগ করা যাবে না.. নিজেকে কন্ট্রোল এর আপ্রাণ চেষ্টা
হা.. হা.. হা.. হি.. হি.. হি.. হো... হো.. হো... দুই পাটি দাত.. পুরোটাই বের হয়ে পরছে.. .. আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে.. কে যে এই গানটা গেয়েছিলো... ব্যাটার মাথায় মাল আছে.. আমার রাজকন্যা .. ওইতো দেখা চাচ্ছে.. সেই পরিচিতি চুল.. পরিচিত চোখ.. ঠোট.. নাক .. মুখ .. সব .. ত্বাবীব ভাবে.. বিয়ের পর এই মেয়েটাকে বুক পকেটে ঢুকিয়ে রাখবো.. একটু পর পর বের করে দেখবো.. আরো কত্তো যে স্বপ্ন অহনাকে ঘিরে..
রিক্সাথেকে নেমে গট গট করে সোজা ক্লাসে... মেয়েটার মনে কি একটুও দয়ামায়া নেই? ওর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি.. ত্বাবীব এর ঠোটটা ফুলে ওঠে অভিমানে.. চোখটা ছল ছল করে ওঠে.. চোখের নিমিষে কষ্টের একটা স্রোত সমস্ত শরীরে বয়ে যায়.. ক্যান এমন কর তুমি? এই মেয়ে তুমি কি জানো তোমার জন্য কত্ত রাত নির্ঘূম কাটিয়েছি? মেয়েরা ক্যান এমন হয়? অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে যায় ত্বাবীব এর।
ত্বাবীব এভাবেই প্রতিদিন অহনার জন্য অপেক্ষা করে.. কবে তার রাজকন্যা তার দিকে একটু মুখ তুলে তাকাবে.. সে আশায়.. ..