বৃহষ্পতিবারটা অসম্ভব ব্যস্ততায় কাটলো। অফিস শেষ করে গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন নিয়ে দৌড় ঝাপ বুঝতেই পারেন। তিনটা সার্কেলে বন্ধুদের সাথে এটেন্ড করে আবার ১০টায় বাসায় ফেরা... দ্যান এয়ারপোর্ট দৌড়... ১১:৪৫ ট্রেইন। স্টেশনে পৌছে দেখি পুরা মাছের বাজার। বৃহস্পতিবার হওয়ায় সকলেই ছুটছে বাড়ির দিকে। যথাসময়ে ট্রেন আসলো এবং শুরু হলো আমাদের শ্বাশ্বতর কাছাকাছি যাওয়ার সম্ভাবনার।

কুউউঝিক ঝিক - আহা কতদিন রেল গাড়িতে উঠা হয় না ... ভুলেই গেছি। রেল গাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম... ক্যামন জানি একটা নস্টালজিয়া। জার্নিটা ভালই লাগছিল। কেউ কাউকে ঘুমাতে দিচ্ছি না। তার মধ্যে নেমেসিস আর আমি পাশাপাশি বসার কারনে বেটায় আমারে ঘুমাইতে দিতাছিল না :(। ওইদিকে কালপুরুষদা আর রঞ্জু ভাই ঠিকি ঘুম দিছে :(। দিপু, মেসবাহ ভাই আর উজ্জল একত্রে বসার কারণে উজ্জল চিকনে ঠিকই একটা ঘুম দিয়া লইছে। চারজনের খুনোসুটি। বিড়ি ফুকাফুকি। কে কারটা আগে শেষ করবে সেই ধান্দা ;-) । ক্ষনে ক্ষনে চা না পাওয়ার খেদ। চমত্কার একটা ট্রেন জার্নি শেষে রাজশাহী পৌছা। স্টেশনে নেমেই দ্রুত ছোটা রেস্টুরেন্টে। দোকানে ঢুকেই আনলিমিটেড লুচি আর তরকারীর গলধকরন। ইতিমধ্যে আমি জামাই খেতাব পেয়ে গেলাম ;) (বিবাহ যোগ্য পাত্র হিসেবে)।যার কারণে একটু বিশেষ খাতির পাচ্ছিলাম। কিন্তু রাজশাহীতে কোন সুন্দরীর দর্শন না পাওয়া আমায় মর্মাহত করলো ;-) ...

কালপুরুষদার বাসায় পৌছে শাওয়ার নিয়ে রাতের ক্লান্তিকে ঝেড়ে... ফুরফুরা হয়ে ছুটলাম শ্বাশ্বতের কাছে। মাইক্রোবাস নিয়ে আরো একটা চমত্কার একটা ভ্রমনের মুডে ছুটে চলা শ্বাশ্বতের নিকট থেকে নিকটবর্তী হওয়ার আপ্রান চেষ্টায়। নিজস্ব পরিবহনের কিছুটা সুবিধা... মাঝে থেমে থেমে গরুর খাটি দুধের চা পান.. চানাচুর ভর্তা... ;)। গায়ের চায়ে ধোয়ার একটা গন্ধ পাওয়া যায়। অদ্ভুত .. গুড় দিয়ে চা বানানোর সেই স্বাদ... না খেলে বোঝানোই যাবে না। গ্রামের ঝুপড়ি চা এর দোকানে চা খাওয়ার অনুভুতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ছোট্ট একটা মফস্বল শহর নাটোরের গোপালপুর। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের অধীনের স্কুলে শাশ্বত সত্যর বাবা অরুণ সত্য শিক্ষকতা করেন। সেই সুবাদে এলাকার ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোই চিনে। বাড়ির কাছে এমন একটা ছেলে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল শাশ্বতর কাছে।

শ্বাশ্বতর বড়ি পৌছাতেই শ্বাশ্বতের বাবার সাথে দেখা। আমাদের জন্য অপেক্ষায় তার পায়চারি। ছোট সময় যখন একজন আদর্শ শিক্ষক এর ছবি কল্পনা করতাম ঠিক তেমন। চমত্কার বাচনভঙ্গি এবং স্নেহসুলভ আচরনে মুগ্ধ। মিনিটের মধ্যেই আপন করে নেয়া এই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ। আমার ভাল লেগেছে


হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছেন মেসবাহ য়াজাদ এবং নেমেসিস

আরে এই ছেলেটাকেতো আমি চিনি। ঘড়ে ঢুকে শ্বাশ্বত দেখেই এরম মনে হচ্ছিল। কতদিনের চেনা জানা (জানা আপা না কিন্তু)। বসলাম ওর পাশেই। কথা হলো। ওর মনে অসুস্থ্যতার কোন স্পর্শই ছুতে পারেনি। বেচে থাকার কি শক্ত মনোবল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। ও বাচবে। অবশ্যই বেচে উঠবে। এমন প্রাণশক্তি যেই ছেলের ... তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। ও সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবে আমাদের কাছে। ছেলেটার খুউব ইচ্ছা আমাদের সকলের সাথে আড্ডা দেয়ার... ব্লগিং করার... আরো কত কি.. । শ্বাশ্বতর দিকে তাকিয়ে ওর মায়ের চোখের পানি আমাকে পোড়ায়। আমার মায়ের কথা মনে হয়। কান্না লুকাই সকলের অগোচরে... ইশশ আমি যদি শ্বাশ্বতর জায়গায় থাকতাম তাহলে আমার মাটার কি হতো? ভাবতে পারিনা...


আমরা সকলে, রঞ্জু ভাই, পেছনে মেযবাহ ভাই, শাশ্বত, আমি, দিপু, নেমেসিস... ক্যামেরায় কালপুরুষদা

শ্বাশ্বত, বাবা, মা এবং ছোট্ট একটা বোন নিয়ে ওদের ছোট্ট ছিমছাম একটা সংসার। একমাত্র উপার্যণক্ষম ব্যাক্তি শ্বাশ্বতর বাবা। বয়সের ভারে অবসরের পর যেই সন্তানের উপর নির্ভর করার কথা সেই সন্তানেরি আজ বেচে থাকার প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা। সকল খোজ খবর নেয়ার চেষ্টা। কতটুকু আগানো হয়েছে চিকিত্সার ... কি করা যেত... কি করা হয়েছে। বিস্তারিত। আসলে ২০০৬ ভেলরে যখন প্রথম নিয়ে যাওয়া হয় তখন শ্বাশ্বতের জন্য যে টাকার অংকের প্রয়োজন ছিল এখন ২০০৮ সালে এসে তার দ্বিগূন খরচ প্রয়োজন হবে। এবং যত দ্রুত চিকিত্সা শুরু করা না যাবে ততই এই খরচ বাড়তেই থাকবে। মেসবাহ য়াজাদ ল্যাব এইড সহ ঢাকার কিছু স্পেশালিষ্ট ডাক্তার এর সাথে কথা বলবে। যদি চিকিত্সা ঢাকায় করা সম্ভব হয় তাহলে হয়তো খরচের পরিমান অনেকটা কমানো যাবে।

mesbah_aajadblog_1215839996_3-pic_03


ব্লগার এবং নন ব্লগার বন্ধুদের সহায়তার প্রাথমিক তহবিল শ্বাশ্বতর বাবার হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা পোষন করতেই শ্বাশ্বতকে সহায়তায় হাত বাড়ানো মানুষগুলোর জন্য শ্বাশ্বত, বাবা, মা... সকলেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন কিছুটাক্ষন। সুনশান নিরবতা... পবিত্র একটা পরিবেশ। হে ঈশ্বর... আমার ছেলের জন্য সহায়তার হাত বাড়ানো মানুষ গুলোকে.. .. ... .. L

mesbah_aajadblog_1215840233_9-pic_09


বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় শ্বাশ্বতের চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। কোথায় ৩০+ লাখ টাকা প্রয়োজন আর সেখানে আমরা মাত্র প্রায় লাখ যোগার করতে পারলাম। ঈশ্বর তোমার সহযোগীতা একান্ত কাম্য। নইলে ছেলেটা বাচবে না :(

আসলে এই ছেলেটাকে বাচানোর জন্য তেমন কিছুই আসলে করতে পারলামনা। এ দায় আমার। এই ব্যর্থতা আমার। আমি হয়তো মানুষের কাছে পৌছাতে পরিনি শ্বাশ্বতকে বাচানোর আকুল আহ্বান। আমি সত্যি দু:খিত... লজ্জিত ... ক্ষমা চাই শ্বাশ্বতের কাছে... আপনাদের কাছেও...

http://www.youtube.com/v/-sKnY4IUxxc

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নির্মিত মিউজিক ভিডিও। যেটা আজ থেকে হতে চ্যানেল আই এ সম্প্রচার হবে।

ছবি: কালপুরুষদা এবং মেসবাহ য়াযাদ


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নির্মিত মিউজিক ভিডিও। যেটা আজ/কাল হতে চ্যানেল আই এ সম্প্রচার হবে।