সুখ কি?

সুখ- এর জৈবিক সংজ্ঞা : কোন স্টিমুলাস বা উত্তেজকের প্রতি আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক ও স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া যা আমাদের ভেতর সুখের অনুভব তৈরী করে

আবিষ্কৃত রাসায়নিক যৌগ "এন্ডরফিন্স" গুলোকেই এই "সুখের" মূল বলে বিভিন্ন গবেষনায় জানা যায় এখন ঘটনা হইলো, এন্ডো মানে হইলো ভিতরের আর মরফিন মানে বেদনা নাশক তার মানে কি দাড়াইলো ? সুখের রাসায়নিক শরীরের ভিতরের বেদনাকে কিংবা অসুখের অবস্থাকে পরিবর্তন করে সুখের অবস্থায় নিয়ে যায়

ক্ষুধা পেলে সুস্বাদু খাবার আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় প্রিয় মানুষের চুম্বন। প্রিয় দেশের জয় আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় পড়ন্ত বিকেলের রোদ। সুখের অনুভবকে বিশ্লেষন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তাই ইন্দ্রিয়কে অনুসন্ধান করেছেন, মানবের মস্তিষ্ককে কেটে ছিড়ে দেখেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন - সুখের স্টিমুলাস বা উত্তেজক শরীরের বাহির থেকে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ভেতরে আসুক, অথবা ভিতরের কোন এক উৎস থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছাক - সুখ আসলে শেষ পর্যন্ত কিছু জৈব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ।

জীবণে সবাই সুখী হতে চায়, কিন্তু, কেউ কি একজন সুখী মানুষের ছবি চিএপটে তুলতে পারবেন? না, আমরা কেউ পারব না আশ্চর্য, কি অদ্ভূত অক্ষমতা!!! আসলে সুখ কি? সন্তুষ্টি, আনন্দ, হাসি, তৃপ্তি, সাফল্য, সমৃদ্ধি, সম্মান, স্বীকৃতি, ভালবাসা, যত্ন -এগুলো কি সুখের অবয়ব? কি দিয়ে সুখের ছবি আঁকা যায়? আমি সুখ খুঁজি অনুভূতিতে, ভাবনায়, না পাওয়ার এ পৃথিবীতে কিছু পাওয়ার মাঝে হয়তোবা, অন্যরা ভাববে ভাবুক মানুষ, ভাবনায় সুখ খুঁজে নেন জীবণের চৌহদ্দিতে কোন চমক নেই, কোন অর্জন নেই, তারপরেও ভাবে সুখী এখানেই জীবণের বৈচিএ্য একেক মানুষ একেক ভাবে দেখে

সুখ কি প্রজাপতি, প্রেয়সীর মিস্টি হাসি, ভোর রাতের মিস্টি স্বপ্ন, চায়ের কাপে উষ্ণ চুমুক, কর্মব্যস্ত দিনের শেষে রবীন্দ্রসংগীত, রিমঝিম বৃস্টির শব্দ, তপ্ত সন্ধ্যায় দক্ষিণা বাতাসের আলতো ছোঁয়া, মুঠো ফোনের সেই রিংটোনটি, জোৎস্না রাতে রূপালী আলোর বন্যা, কিন্নরীর সুর, অপেক্ষার অকস্মাৎ অবসান, নিস্পলক দৃস্টি, অপ্রশস্ত বারান্দায় পদচারিতার পদধ্বনি? আসলে কি জানেন, সুখ আপনার খুব কাছাকাছি বসবাস করে, খুঁজে নিতে হয় তাকে, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তাকে লালন করতে হয় সুখ সোনার হরিণ নয় আমি সুখী দু:খ আমায় ছোঁয় না এরকম প্রত্যয়ী ভাবনায় জীবণ সাজাতে পারলেই সুখ নামক পাখিটি বাস করবে প্রতিটি জীবণে আমার আজকের সকালের নিস্তরঙ্গতায় তাই সুখের শান্তিধারা বইছে আসুন, আমরা সুখ পাখিটাকে মনের খাঁচায় বন্দী করে তাকে লালন করি আমৃতু্য

"...আজি বহিতেছে
প্রাণে মোর শান্তিধারা
মনে হইতেছে
সুখ অতি সহজ সরল, কাননের
প্রস্ফুট ফুলের মতো, শিশু-আননের
হাসির মতন, পরিব্যাপ্ত, বিকশিত,
উন্মুখ অধরে ধরি চুম্বন-অমৃত
চেয়ে আছে সকলের পানে বাক্যহীন
শৈশববিশ্বাসে চিররাএি চিরদিন

বিশ্ববীণা হতে উঠি গানের মতন
রেখেছে নিমগ্ন করি নিথর গগন

সে সংগীত কী ছন্দে গাঁথিব! কি করিয়া
শুনাইব, কী সহজ ভাষায় ধরিয়া
দিব তারে উপহার ভালোবাসি যারে,
রেখে দিব ফুটাইয়া কী হাসি-আকারে
নয়নে অধরে, কী প্রেমে জীবনে তারে
করিব বিকাশ! সহজ আনন্দখানি
কেমনে সহজে তারে তুলে ঘরে আনি
প্রফুল্ল সরস! কঠিন-আগ্রহ-ভরে
ধরি তারে প্রাণপণে-মুঠির ভিতরে
টুটি যায়! হেরি তারে তীব্রগতি ধাই_
অন্ধবেগে বহুদূরে লঙ্ঘি চলি যাই,
আর তার না পাই উদ্দেশ\
চারি দিকে
দেখে অজি পূর্ণপ্রাণে মুগ্ধ অনিমিখে
এই স্তব্ধ নীলাম্বর, স্থির শান্ত জল_
মনে হল, সুখ অতি সহজ সরল\

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ব্লগিং অনেক দিনের... কমিউনিটি ব্লগে সামহোয়ারইনব্লগেও দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে ফেল্লাম... অনেক ব্লগ পড়া হয় ... সব লেখা যে ভালো লাগে তা নয়.. কিছু কিছু লেখা মনে হয় অন্যদের সাথে শেয়ার করি...
আজ শেয়ার কর্লাম পাললিক মনের শবে-বরাত নিয়ে একটা লেখা...

হালুয়া রুটির শবে-বরাত, শিকেয় তোলা আল-কুরআন ও Customize ইসলাম চর্চা

শপথের কান্ডারী, সুশীলতার কাবাগৃহ প্রথমালো পত্রিকার গত মঙ্গলবারের নকশা পাতা পুরোটাই ভর্তি করা হয় শবে-বরাতের হালুয়া ও নানাবিধ রেসিপি দিয়ে! বোধ করি অন্যান্য পত্র-পত্রিকার কথিত ধাঁচের পাতাও খালি থাকবেনা। আর রেসিপি দেয়ার মহান দায়িত্ব দিয়ে তো কাগজওয়ালারা খালাস! মাল মসলা দেবে কে? কেন- অগোরা, নন্দন, পিকিউএস, সপ্ন সবাই তো এরই মধ্য ঢাকঢোল পিটিয়ে তেল, আটা, ময়দা, গোস্ত, সুজিতে শবে বরাতের মহান পবিত্রতায় (!) গদগদ হয়ে বিরাট মূল্যহ্রাস! খাও বাংগালী খাও। হালুয়া রুটি গোস্ত ভূনা খেয়ে কোকাকোলার ঢেকুর তুলে জপতে থাক- শবে বরাত, ইল্লাল্লাহ্‌! ইহকাল পরকালে ঠেকায় কে?

শিশুবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক নীতি সমূহের চেয়ে আধা, সিকি বা পুরা ভুয়া নানান 'ভাল' কাজের উৎপাতে প্রাণ ওস্ঠাগত। হিজরী শাবা'ন মাসের এদিনে মা, চাচী, দাদীকে দেখেছি বেশ কিছু রসম নিয়ে দৌড় ঝাপঁ। মুরগী জবাই, রুটি বানানো এর মধ্য অন্যতম। জিজ্ঞাসু মন এটা কেন? ওটা কেন? বলে জননী কে ঘ্যানর ঘ্যানর করলে জবাব এদিনে আল্লাহ রিজিক বরাদ্ধ করেন। তাই ভাল ভাল খাবার। তা না হলে সারা বছর ছাইপাশ খেতে হতে পারে!

মাগরিবের পরপরই স্থানীয় মসজিদে ওয়াজের জোয়ার। অন্তত: রাত ১২ টা অবধি এলাকাবাসীর উপর শব্দ জুলুম। তারপর ব্যাপক কোরাস সমেত মিলাদ। ইয়া নবী সালামালাইকা..। অত:পর জিলাপী বিতরন। জনতার মূলস্রোত এতেই হাঁফিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষন অযু চেপে রাখা থেকে নিস্কৃতি পেয়ে মনের আনন্দে পেটের বায়ুমন্ডল হালকা করতে করতে বাটিতে গমন। বোধগম্য অবোধগম্য নানাবিধ ধর্মীয় উপাখ্যান, আরবী ফারসি শে'রের নর্তন কুর্দন শেষে কাঠমোল্লার মাইক থেমে আসলে নিদ্রাহত জীবমন্ডলের স্বস্তি প্রকাশ।

শেষরাতে নিকটবর্তী আসমানে স্রস্টার গণ-ক্ষমা ডাকে সাড়া দেয়ার মত জাগ্রত মুসলিমের সংখ্যা খুবই সীমিত। যারা থাকতেন তাদের মধ্যেও পরবর্তী ২/৪/১০/২০ বছরেও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় 'খাছলত' বদলের কোন নমুনা দেখিনি!
তবে ম্যালা বদলেছে বরাতের রাতের বরাত। বেনিয়া দিবস সংস্কৃতির কবলে পড়েছে বেচারা রাতটি। পাঁড় ধর্মবিচ্যুত পত্রিক বা টিভি চ্যানেলও ২/৪ টা প্রবন্ধ, ৩ খানা টক-শো এমনকি ক্যালিওগ্রাফি যুক্ত লোগো প্রদর্শন করছেন ব্যাপক পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটিরা রাতভর দৌড়াচ্ছেন বদনা শাহ, চৌকি শাহ, হুক্কা শাহ সহ নাম জানা বা অজানা শাহ বাবাদের দরবারে! পিছিয়ে নেই বিএনপি, আলীগ সহ প্রকৃত হালুয়া রুটি কেন্দ্রীক দলগুলো। কাঙালী ভোজ, মিলাদ শরীফ...। তবে গোফেঁ তা দিচ্ছে সুপারস্টোর গুলো। হৈ হৈ রৈ রৈ করে এ বাবদ বেচা বাট্টাটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। অধ:পতিত আরেকদল আতশবাজি পোড়াচ্ছে। সাকুল্যে এ..ই... আমাদের শবেবরাত!

বড্ড বেকায়দায় মহানজীবন ব্যবস্থা ইসলাম। কাজের বুয়া বা ড্রাইভারদের সমান নিয়ন্ত্রনে নিমজ্জিত। পরিমানমত ও প্রয়োজনমত এবং সুবিধামত একটুখানি ইসলাম চর্চা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে সিংহভাগ মুসলিম। পবিত্রগ্রন্থ কুরআন শিকেয় তোলা আছে ১ বা ২ পিস। বিশেষ ক্ষনে, লগনে তা নামানো হয়। বিশেষ করে কেউ বিয়োগ হলে। ব্যান্ড, নর্তকী, বিবাহসজ্জার দলের মত ভাড়ায় মোল্লার দল পাওয়া যাচ্ছে। ইংগিত করলেই সদলবলে এসে কোরান খতম কাম মৌলুদ শরীফের প্যাকেজ সার্ভিস হোম ডেলিভারী। রেটও বেশী না গ্রামে ১০ জনের দল হলে মাথাপিছু ৫০ টাকা, শহরে ১০০ বা আরও! গৃহকর্তার ও বিগত মহাজনের সকল মুসকিল আসান! ন্যাপথালিন, আগরবাতি, আতরের গন্ধ শুকোতে না শুকোতেই চোরাকারবার, ঘুষ, দখল, লুট, প্রতারণা...।

পিছিয়ে নেই পাঁড় ধার্মিক দাবিদাররাও। তথাকথিত ইসলামি চিন্তাবিদরা। বাছাইকৃত আয়াতের চটি বেরিয়েছে। এমনকি খন্ডিত আয়াত। নিজেদের বক্তৃতার মাঝখানে একটুখানি বসিয়ে দিলেই পগারপার। বা! বা! বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুনের মাঝে আল কোরানের এমন আলো! ঘরে ঘরে উহা জ্বালাতে হবে! জন্ম হচ্ছে ক্ষীনদৃস্টি সম্পন্ন আরেকদল দলান্ধ।
তবে প্রায়ান্ধ সদ্যজাত তথাকথিত জেহাদী জজবা থেকে এটা ঢের ভাল। নির্বিচারে নিরীহ প্রানে অকারনে বোমাহামলা করে, ফতোয়ার ফ না বুঝেই ঢিলা কুলুখ মেরে, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন হৈ হট্টগোল কারী ভোদাই গুলোও রেফারেন্স দিয়ে বসছে শক্রকে কতল কর। মহাবিপদ!

এসবের ফাঁদেই পড়েছে লাইলাতুল বারাআ'ত। আসলে মহান স্রস্টার সান্নিধ্য আসার যেমন রয়েছে কতগুলো মৌলিক শর্ত, আর তেমন রয়েছে কিছু স্পেশাল মোমেন্ট। হালাল জীবিকা তেমন ১টি কঠিন শর্ত। আর প্রত্যেকটি রাতেরই শেষ ভাগ তেমন ১টি মূহুর্ত। প্রশান্ত প্রকৃতি, নিস্তব্ধ ভূমন্ডল, আবছা আলোকের মাঝে নি:সঙ্গ একেকজন মানুষের সাথে তাদের স্রস্টা, রিজিকদাতার একান্ত আলাপের সময়। ৩৫৪ রাতের মধ্য এ রাত যদি আরো মহিমামন্বিত হয়, হোক। আরো ভাল।

পাপিস্ঠ মানবমন্ডলীর বর্ধিত সুযোগ। এটার সাথে হালুয়া, বিজ্ঞাপন, ম্যারাথন ওয়াজের কি সম্পর্ক?

এ এক নিভৃত সময়। মহা-গুরুত্বপুর্ন! হৈ চৈ এর নয়।

সংগৃহীত : পাললিক মন