আমাকে ভোলার অহংকারে তুমি কতোবার ওল্টাবে ঠোঁট ?
কতোবার বোঝাতে চাইবে-ভালো আছো খুব -
এক লহমায়
প্রীতির চিহ্ন সব মুছে দিয়ে?

কতোবার তুমি অঙ্গুলি নাড়িয়ে বোঝাবে- নেই ! একবিন্দুও কষ্ট নেই !
পেছনের ফেলে আসা পথ- কী প্রবল সহজে পেরেছো-
দুপায়ে মাড়াতে !

আমি জানি, জীবন বাজীতে রেখে
তুমি হেসেছো মহাসুখে

স্মৃতির শিকড় উপড়ে বোঝাতে চেয়েছো
কী ভীষণ ক্ষুদ্র আসলে তোমার ওপর আমার প্রভাব,
পৃথিবীর কিছুই পারেনা আর একবার
একটি বারের জন্যেও -ফেরাতে তোমাকে !

অহংকারে অহংকারে তুমি এইভাবে পৃথিবী মাতাও- আমি জানি
তবুও বৃষ্টির কাছেই শেষতক প্রবল নতজানু তুমি-

কেবল বৃষ্টির কাছেই ফিরে আসে তোমার ভেতরের সেই তুমি-
কেবল বৃষ্টিই তোমাকে ফেরায় পুনরায়
পুনর্জন্মের মতো স্বচ্ছ সুন্দর সেই চিরচেনা বিশুদ্ধ অনুভবে....

আমি জানি, যখন বৃষ্টি নামে বিরতিহীণ,
একটানা ঝরো হাওয়ায়, অস্থির অনাচারী তান্ডবে-

যখন বৃষ্টি নামে রমনায়, রেস্তোরায়, সবুজ ঘাসের বুকে
প্রেমিকের উষ্ণতাহীণ-অনার্দ্র বুক জুড়ে-

তখন তোমার জানালার কাঁচে
এক একটি কষ্টের কণার মতো সারারাত- বেদনায় জমতে থাকে
বৃষ্টির অযুত অসংখ্য কষ্ট মেশানো সব কণা....

তখন নিমিষেই- ভীষণ বৈরী সব নিয়ম নিষেধ দুমড়ে-মুচড়ে
তোমার সাজানো অহংকার ভেঙ্গে পড়ে,

ছিটকে পড়া নুড়ি পাথরের মতো....
মুহুর্তে এক আশ্চর্য্য ক্ষিপ্রতায়-হিম শীতল এক
বৃষ্টি ঢুকে পড়ে -তোমার অস্তিত্বে, অনুভবে, সত্বায়-
অনুতাপে !

আর তখন-
একটি হারিয়ে ফেলা প্রিয় ডায়রীর সবকটি পাতা
একটু একটু করে উল্টে দেখার মতো করে- হু হু বেদনায়-
তোমার আবার একটু একটু করে
মনে পড়ে যেতে থাকে....
আমাকে!

লেখাটি মা দিবসকে নিয়ে লিখেছিলাম... প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের বহুল জনপ্রীয় ব্লগ সামহোয়ারইনব্লগ এ (http://www.somewhereinblog.net)। আমি এই ব্লগ এ প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নামে পরিচিত। এটি আমার জীবনের সবচাইতে বহুল পাঠক প্রিয় পোস্ট। লেখাটি http://www.priyoaustralia.com.au/ সাইটে ২০০৮ সালের মা দিবসের শ্রেষ্ট লিখা বিবেচিত হয়েছে (লেখাটির লিংক: http://www.priyoaustralia.com.au/index.php?news=12333)।

গল্পের শুরুটা ছিল শৈশব দিয়ে। যখন আমি ছোট.. দরিদ্রতার মধ্যে আমাদের বসবাস... পর্যাপ্ত খাওয়া জুটছিল না। যখন কিছু খাদ্যের সংস্থান হয় তখন মা আমাকে তার অংশটুকুও আমাকে দিয়ে বলত.. “আমার ক্ষুধা নেই”। এটা ছিল আমার মা এর প্রথম মিথ্যা কথা

বাড়ন্ত সময়ে, মা সন্তানের পুষ্টিমানে এর কথা বিবেচনা করে আমার জন্য মাছ রান্নার চেষ্টা করতেন। একদিন মা আমার তিনটে মাছ রান্না করলেন... কারণ আমার পরিবার এর সামর্থের বিচারে এটাই অনেক। তো, একটা মাছ বাবাকে দেয়া হলো.. আর দুটা আমাকে। আমি একটা মাছ মাকে দিতে গেলাম.. মা নিতে চাইল না। বলল... তোমার এখন বেশী বেশী মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আর আমার আসলে মাছ খুব একটা ভালও লাগে না। এটা ছিল আমার মা এর দ্বিতীয় মিথ্যা কথা

আমার লেখাপড়ার জন্য মা কাজ করছে... এক রাতে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে.. মাকে বললাম.. “মা, তুমি ঘুমাচ্ছ না কেন? কাল তো আবার তোমার কাজে যেতে হবে।”... মা আমাকে বলল.. “বাবা, তুই ঘুমা... আমি আজ টায়ার্ড না”। আসলে তখন আমার স্কুলের সেশন ফি দেয়ার সময় ছিল। আর এই দুশ্চিন্তায় আমার মা’এর চোখে ঘুম ছিল না। এটা ছিল আমার মা এর তৃতীয় মিথ্যা কথা

আমার এসএসসি পরীক্ষার সময়... মা আমার সঙ্গে গিয়েছেন। পুরোটা সময় রোদ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছেন তার সন্তানের জন্য। বেল বাজার পর আমি মায়ের সাথে মিলিত হলাম। মা ফ্লাক্সে ভরে আমার জন্য গরম দুধ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। দুধটুকু অবশ্যই আমার মায়ের ভালবাসার চাইতে বেশী ছিল না। এতক্ষণে খেয়াল হলো মা ঘামে ভিজে জবজবে.. আমি কিছুটা খেয়ে মাকে বাকিটা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম... মা বলল.. “বাবা... আমি তৃষ্ণার্ত নই”। এটা ছিল আমার মা এর চতুর্থ মিথ্যা কথা

লেখাপড়া সমাপ্তির পর যখন আমি চাকরিতে জয়েন করলাম। আমার বৃদ্ধ মা কে অবসর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করালাম। মা রাজী হলো না। মাকে কোন টাকা দিলেও তা সাথে সাথে ফেরত দিত... বলত আমার পর্যাপ্ত টাকা আছে। এটা আমার মা এর পঞ্চম মিথ্যা কথা

স্নাতকোত্তর লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর যখন একটি হ্যান্ডসাম স্যালারীর চাকরির অফার গ্রহণ করি... এবং মাকে সাথে রাখতে চাই... আমার মা বলে “এরকম উচ্চতর জীবন যাপনে আমি অভ্যস্ত নই”। এটা ছিল আমার মা’র ষষ্ঠ মিথ্যা কথা

আমার মা যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী... তখন আমি মা’র কাছ থেকে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছিলাম। আমি দ্রুত বাড়ি ফিরে হাসপাতালে মায়ের কাছে গেলাম। অপারেশনের কারণে তিনি ছিলেন বিছানায় শয্যাশায়ী। মা আমার আমায় দেখে অনেক কষ্টে হাসলেন। কিন্তু এটা ছিল আমার কাছে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। কজ, মা আমার বিছানায় রোগ শোকে ক্ষীণ, শীর্ণ হয়ে পড়েছেন। মা আমায় বলছিলেন “বাবা, কাঁদে না... আমার কোন ব্যথা নেই তো”। এটা ছিল আমার মা’র সপ্তম মিথ্যা

যে মা আমাকে দিয়েছে দুনিয়া দেখার অধিকার... যিনি নিজে কেঁদে আমাকে কান্না স্পর্শ করতে দেন নি... যার চোখে সব সময় দেখেছি ভালবাসার আলোকচ্ছটা... সেই স্বর্ণ হৃদয়ের মা.. আজ সে ক্ষীণ শীর্ণ, রোগ শোকে কাতর।

বন্ধুরা.. মা’কে ভালবাস। জীবনের সকল ভালবাসা মা’র জন্য উত্সর্গ করলাম। মা তোমায় ভালবাসি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে। ভাল থাক আমার মা জননী।



একটা চেইন মেইল এর থিম অনুরন করে লিখা


লেখাটি ১২ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28797003

মা আমার সাধ না মিটিল.. আশা না পুড়িল... সকলি ফুরিয়ে যায় মা...
অথবা..
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই... ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।
আবার আব্রাহাম লিংকন বলেছেন
"আমি যা কিছু হয়েছি, অথবা হতে আশা করি, তার সবকিছুর জন্য আমি আমার মায়ের কাছেই ঋণী"।
হাদিসেও...
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।

এমন অনেক কথা... মা'কে নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে... যা একত্রিত করলে হয়ত পাতার পর পাতা ভরে যাবে... শেষ হবে না মা'এর কথা.. মা'এর জন্য ভালবাসার কথা..

আজ বিশ্ব মা দিবস... জাতীয় পর্যায়ে পালিত একটি দিবস। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে এইদিন আমার অসহায় মা'দের জন্য বিশেষ কোন সু-সংবাদ হয়তো বয়ে আনবে না... হয়ত বরাবর এর মতোই তার ঘরে চুলায় আগুন জ্বলবে না... তারপর ও পৃথিবীর সমস্ত সন্তানদের কাছ থেকে তাদের মা'দের জন্য ভালবাসার কোন কমতি থাকবে না।

যারা সুবিধাবঞ্চিত, স্বকর্মসংস্থান জীবনযাপন করেন, হাড়ভাঙ্গা মেহনত করেন, যাদের ছুটি চাওয়ার কোন জায়গা নেই, ছুটির আবেদনের কোন সুযোগ নেই, গরিব, দুস্থ নদীভাঙ্গা, গৃহহীন, খোলা আকাশের নিচে শহরের বড় বড় রাস্তায় ফুটপাতে দিন কাটায়, রাত যাপন করে, রোজ আনে রোজ খায়... তাদের কি কোন বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না? পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন নেই তাদের? এমন হাজার প্রশ্ন... তাদের চাহিদা রাষ্ট্র কতটুকু মেটাতে পারছে? কি জানি... হয়তো রাষ্ট্র সদিচ্ছা এবং সামর্থকে এক সুতোয় আনতে পারছে না... হাবিবুর রহমান বলেছিলেন বড় দু:খি এই বাংলার মাটি... সত্যিই তাই.. :(

"তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও.. আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতী উপহার দিব" নেপলিয়ন এর এই কথা আজ হারে হারে উপলদ্ধি হচ্ছে। আর তাই এই দুরবস্থা থেকে দেশের পশ্চাৎপদ অবস্থান থেকে নারী তথা মা'দের উদ্ধার করতে মা দিবসটি কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত। আজ আমাদের শপথ হোক - প্রতিটি মা'কেই নিরক্ষর রাখা যাবে না। আমরা চাই - প্রত্যেক ঘরে শিক্ষিত মা। একজন শিক্ষিত ও সুস্থ মাই সন্তানকে সুস্থ-সবল ও সুযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারেন। সমাজের সর্বস্তরে নারী তথা মায়ের মর্যাদা ও অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হোক - এইটা মা দিবসের প্রত্যাশা হোক


লেখাটি ১১ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১:০৭ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28796524

আজ একটা মেইল পেলাম... আমার বান্ধবীর... তার অনুমতিক্রমেই মেইলটা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে... স্বাভাবিক ভাবেই তার পরিচয় প্রকাশ হলো না। মেইলটা পড়ে খারাপ লাগলো। আচ্ছা, এই পৃথিবীটা কবে মানুষের বাসযোগ্য হবে? একটা মেয়ে নির্ভয়ে বাচতে পারবে?
---------------------------------------------------------------------------

অনেকেই আমার সাথে কথা বলার সময় বলে, আমি নাকি খুব পিচ্চি একটা মেয়ে । আপনি ও মাঝে মাঝে আমাকে তাই বলেন । কিন্তু, আপনাদের মাঝে অনেকেই জানেনা যে, পিচ্চি এই মেয়েটা জীবনের এই অল্প সময়ে অনেক কিছু দেখে ফেলেছে । এমনও অনেক কিছু আমি দেখেছি যেটা মানুষ কখনো তার প্রিয়জনের জন্য আশা করবে না ।
সে যাইহোক... আচ্ছা, আজ যদি আমি পিচ্চি একটা মেয়ে হই, তাহলে আজ থেকে নয় বছর আগে আমাকে আপনি কি বলতেন? নিশ্চয়ই “বাচ্চা মেয়ে”, তাই না? হা হা হা...

হ্যা, তখন আমি মাত্র ১৩ বছরে পা দিয়েছি, হঠাত একদিন আমারই এক সেকেন্ড কাজিন আমাকে নিয়ে গেল তার বাসায় । সেই পিচ্চি আমি তখনো বুঝিনি যে, আমার কাজিন আমার সাথে কি করতে চাচ্ছে । বুঝলাম তখন, যখন আমার শরীরে আমি একটা হাতের অনাকাঙ্খিত ছোয়া অনুভব করলাম । সেদিন আমার শরীরে একটা মানুষের হাতের অনাকাঙ্খিত ছোয়া, প্রথমবারের মত আমাকে এটা উপলব্ধি করিয়েছিল যে, “আমি আর ছোট নেই, আমি বড় হয়ে গেছি”। কারন, সেদিন তার হাতের স্পর্শ থেকে আমি নিজের অজান্তেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম । একটা বাজে অনুভুতি হচ্ছিল তখন আমার মনের মাঝে । মনে হচ্ছিল, “এই মানুষটা না আমার কাজিন? তাহলে সে আমার সাথে এরকম করছে কেন?”

আমার ঐ প্রশ্ন একটা প্রশ্নই রয়ে গেছে। কারন, সেদিন আমি আমার সেই কাজিন এর হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি নিজেকে। একটা মানুষ যাকে তার বোনের মত স্নেহ করেছে, সে কিভাবে সেই মেয়েটার সাথেই এমন করতে পারে.........কিছুদিন আগেও আমি তা বুঝিনি।

আমি এতদিন ভাবতাম, আমার মত যেসব মেয়ে তাদের ভাই অথবা ভাই সমতুল্য মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের মত দুঃখ বুঝি আর কারো নেই। আসলেই এই দুঃখটা অনেক বড়। আর লজ্জায়, ঘৃনায় এটা কাউকে বলতে না পারার দুঃখটা আরও বড়।

কিন্তু, সেদিন আমি এমন একটা সত্যের মুখোমুখি দাড়ালাম, যার তুলনায় নিজের দুঃখ গুলোকে অনেক ছোট মনে হতে লাগলো।

আমি তখন গ্রামের বাড়ি- সিলেট। সবাই বেড়াতে গিয়েছি, তাই কাজিনদের মাঝে একটা আনন্দের সাড়া জেগেছে। কিন্তু, কেন জানি বেশি মানুষের মাঝে আমার থাকতে ভাল লাগেনা। নিজেকে সরিয়ে সরিয়ে রাখতেই আমি অভ্যস্থ বিধায় কাজিনদের ভির থেকে সরে আমি গিয়ে ঢুকলাম চাচার বাসার স্টোর রুমে। বিশাল বড় রুম, কিন্তু অনেকদিন যাবত এই রুম বন্ধ, অনেক গুমোট একটা গন্ধ রুমে। জানালা খুলে দিলাম সব কয়টা, বাতাস এসে রুমটাকে ভরিয়ে তুললো। মনে হলো,-“রুমটার নিশ্চই অন্য রকম লাগছে আজ!”। আমি বসে পরলাম মাটিতে। পাশেই দেখলাম কিছু পত্রিকা পরে আছে। দুইটা পত্রিকার স্তুপ, “প্রথম আলো” আর “সিলেটের ডাক”। সিলেটের ডাক সেখানকার স্থানীয় পত্রিকা। তাই প্রথম আলো হাতে না নিয়ে ওটাই নিলাম। পুরনো পত্রিকা সব, তবুও পড়ছিলাম। এক এক করে পত্রিকা নামিয়ে রাখছি, এর মাঝে হঠাত চোখ গেল একটা শিরনামে- “এক কণ্যার ২৪ বছরের অন্ধকার জীবনের করুন কাহিনী”। পড়া শুরু করলাম... পড়তে পড়তে কখন নিজের অজান্তে কেঁদেছি, জানিনা আমি।

পত্রিকার কাটিংটা নিয়ে এসেছি, আপনাকে দিলাম। তবুও আমি কি আপনাকে বলবো ঐ শিরনামের নিচে কি লেখা ছিল?




অস্ট্রিয়াতে একটা মেয়ে ১৯৮৪ সালে নিঃখোজ হয়। মেয়েটির নাম এলিজাবেথ। অনেক খোজাখুজি করেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তার পরিবারও তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলো অনেক আগেই। কিন্তু, আজ ২৪ বছর পর মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। হ্যাঁ, মেয়েটি বেঁচে আছে। তাহলে কোথায় ছিল মেয়েটি এই ২৪ বছর?
মেয়েটি গত ২৪ বছর আর কোথাও না, বরং নিজের বাবা’র বাসার আন্ডার গ্রাউন্ডে ছিল। আর এখন সে সাত সন্তানের জননী। তার সন্তানদের বাবা আর কেউ নয়, তার সন্তানের বাবা আর তার নিজের বাবা একই মানুষ!!
হায়! এমনো মানুষ গড়েছেন আল্লাহ্‌?

আজ তো নিজের কষ্ট গুলোকে অনেক অনেক খুব ছোট মনে হচ্ছে আমার । বরং হাসি পাচ্ছে নিজেরই উপর।

কারন, আমি আমার ভাই সমতুল্য মানুষের খনিকের শারীরিক সন্তুষটির শিকার হয়ে কতইনা কেঁদেছি গত ৯ বছর, একবার নিজেকে মেরেও ফেলতে চেয়েছি এই আমি । অথচ, এই মেয়েটি গত ২৪ টি বছর প্রতিনিয়ত তার নিজের বাবা’র শারীরিক সন্তুষটির শিকার হয়েও অন্ধকার একটি ঘরে বেঁচে ছিল! সে আসলে কি? মানুষ নাকি মহামানবি? একটা মানুষের পক্ষে এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব?

যদি এলিজাবেথ বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে আমার দুঃখ তো কোন দুঃখই না । আমি সেদিন আমি আমার সেই প্রশ্নটার উত্তর পেয়েছিলাম । নয় বছর আগে আমার কাজিন কেন আমার সাথে এরকম করেছিল, তার উত্তর আজ আমার জানা হয়ে গেছে ।

আজ আমার কষ্টটা অনেক কম । কারন, যদি একজন বাবা (না পশু) তার মেয়েকে ২৪ বছর আটকে রেখে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষন করতে দ্বিধা বোধ না করে, তাহলে আমার কাজিন তো কমই করেছিল ।

আর আল্লাহ্‌’র কাছে হাজার কোটি সুকরিয়া যে, উনি আমার বাবাকে আমার সামনে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছেন, এলিজাবেথের বাবা’র মত একটা পশু হিসেবে নয়।

--------------------------------------------------------------------------------
সরি.. এখন শুধু ঘৃণা প্রকাশ ছারা আর কিছুই করার নেই..




লেখাটি
১০ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৫১ সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28796225

ছেলেটা দ্বাহিক আর মেয়েটি নাদ্বীদ...

নাদ্বীদ : কেন তুমি আমাকে পছন্দ কর? এত ভালবাসইবা কেন?
দ্বাহিক : (একটু আমতা আমতা করতে করতে...) মানে.. আসলে... কোন কারণ তো জানা নাই... কিন্তু সত্যিই ... আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালবাসি
নাদ্বীদ : কি জ্বালা... বলতে পারনা কেন? তাহলে কীভাবে বল যে আমাকে ভালবাস? এ কেমন পছন্দ তোমার?
দ্বাহিক : সত্যি আমি এর কোন কারণ জানি না ... এর কোন ব্যাখ্যা নাই ... দেখো ... আমি যে তোমায় ভালবাসি সেটা প্রমাণ করে দিব
নাদ্বীদ : প্রমাণ করবে!!! হাহ্ ... কারণটাইতো বলতে পারছ না এখন পর্যন্ত... কি যে ভালবাস বুঝতেই পারছি। এই দেখো.. আমার বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড কিন্তু ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে সে কেন আমার বান্ধবীকে ভালবাসে।
দ্বাহিক : ওকে... ওকে!!! ঠিক আছে... শোন তাহলে
তুমি সুন্দর...
তোমার সুরেলা কণ্ঠস্বর আমায় বিমোহিত করে...
তুমি খুউবই কেয়ারিং...
তুমি বুদ্ধিমতী...
তোমার হাসিতেই আমার মুগ্ধতা...
তোমার সকল মুভমেন্টেই আমার মোহিত হওয়া..

নাদ্বীদ আপ্লুত হয় দ্বাহিক'এর উত্তরে... হঠাৎ করে নাদ্বীদ এর কাছে পৃথিবীটা রঙিন হয়ে ধরা দেয়... মনে হয়... আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে...

কিছুদিন পর... দূর্ভাগ্যবশত নাদ্বীদ প্রচণ্ড একটি দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে কোমায় চলে যায়... দ্বাহিক তার শিয়রে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনে। কখন তার প্রেয়সী চোখ মেলবে... দ্বাহিকের সকাল দুপুর সন্ধ্যা কাটে মেয়েটির জন্য প্রার্থনায়... সুস্থ হয়ে যখন নাদ্বীদ বাসায় ফিরে তখন আর তার সেই মোহিত হাসি অবশিষ্ট নেই... নেই কণ্ঠের সেই মাদকতা...

একদিন দ্বাহিক নাদ্বীদকে কাছে বসিয়ে খুউব ধীর স্থির ভাবে কিছু কথা বলে..
জান...
যে কণ্ঠের মাদকতায় আমি পাগল ছিলাম... আজ আর তার কিছুই অবশিষ্ট নেই তোমার.. এখন আর আমি তোমাকে ভালবাসতে পারি না...
তুমি খুউব'ই কেয়ারিং ছিল... কিন্তু এখন? তুমি নিজেইতো চলতে পারছ না... সো.. এখন আর তোমাকে পছন্দের কিছুই নেই
তোমার যে হাসিতে মুক্ত ঝড়তো .. তোমার প্রতিটা মুভমেন্ট আমার ভাল লাগত... আজ তা হয়তো সবই আছে.. কিন্তু পাগল হওয়ার মতো তো কিছুই নেই...
জান... তুমি বলো .. এখন কি তোমায় ভালোবাসা উচিত? তোমাকে ভালবাসার কি কিছুই অবশিষ্ট আছে?

তুমিতো বার বার আমার কাছে কজ জানতে চাইছিলে...
জান..
আমি এখনো তোমাকেই ভালবাসি...
সেই আগের মত...
এর পেছনে কোন কজ নেই..
ভালবাসতে কোন কজ এর দরকার হয়নি জান..

জানু.. এই এখনো... তোমাকে... শুধু তোমাকেই ভালবাসি...
ভালবাসি...
ভালবাসি...


লেখাটি ০৫ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৯ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28794490

জীবনের মাঝপথে এসে দাড়িয়ে ছেলেবেলার স্মৃতী হাতরাই। অনুভব করি দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া সময়কে। কত কিছু করার ছিল... কিছুই করা হলো না এখনো ... বার বার মনে হয়.. আহা যদি ফিরে পেতাম পেছনে ফেলে আসা দিনগুলো। আরো আগে থেকে অনেক কিছু শুরু করা যেত। অনেক কিছুই পড়ার ছিল ইচ্ছা ছিল শেখার ... যা এখন আর সম্ভব নয়। সময় ফুরাতে শুরু করেছে।

খুউব ফিরে পেতে চায় ছেলে বেলার নানান রঙের দিনগুলো। ফুলের উপর বসে থাকা নানান রঙের ফড়িং গুলোকে ধরার কি আপ্রান প্রচেষ্টা। ছুটে চলা পেছন পিছন। অথবা পাখির বাসার খোজে বের হওয়া। বইগুলোকে অন্য কোন ক্লাসমেটকে ধরিয়ে দিয়ে স্কুল এর দেয়াল পেরিয়ে পালিয়ে ফুটবল খেলতে ছোটা। এখন যে রোদ দেখেই ঘামতে থাকি অথচ তখন এটা কোন ব্যাপারই ছিল না। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি কে থামায় আমাদের। মনে আছে নানা বাড়িতে বেড়াতে গেলে... বোশেখ মাসে প্রচন্ড বেগে ধেয়ে আসা কাল বৈশাখি ঝড় ... যে বাতাসে দাড়ানো যেত না... অথচ সেই বাতাসে আম কুড়াতে বের হয়ে পরতাম। রাতে ঝড় হলে হারিকেন সাদা পলিথিন ব্যাগ এ ভরে বের হতাম...

রঙ হারায় অনাবিল সুখ আর স্বার্গীয় প্রশান্তির প্রেমেও। পাশের বাসার মেয়েটার জন্য আয়রন করা ড্রেস ছারা চলতই না। চুলে ভাজ মারতে মারতে তো মাথাই খালি হয়ে গেল। আজ পথ হারায় অবলিলায়... তবে এ পথ হারানো যে কেবল হারানোর জন্যই নয়, তাও তো সত্য। শাশ্বত প্রেম আজীবন বাজে, ভেতরটায়। আর তাই ফিরে পেতে চায় মন ফিরে যেতে চায়। কোথায়? সেই ফেলে আসা দিন...


লেখাটি
২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:১১ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28790793

শুভ হোক
এই প্রত্যুষ-এ সুষমা
এই প্রান্তর-পবিত্র ভূমি, ভাষা
বাঙলা!

নতুন আলোর প্রভা
নতুন দিনের বোধন
১৪১৫!

শুভহোক
প্রতিপ্রাণ-প্রতিক্ষণ

শুভ নববর্ষ...

লেখাটি ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৩:২৫ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28787613

প্রিয় বন্ধুরা

http://www.bangladesh1971.net ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে শুভ উদ্ভোধন হয় একজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে দিয়ে। একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা। যিনি মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্তৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে গেছেন।

আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন নিয়ে আপনার লিখার একটি কপি বাংলাদেশ ১৯৭১ সাইটে যদি জমা রাখেন তাহলে ভবিষ্যতে একটি বিশাল সংগ্রহশালায় রুপান্তরিত হবে। আশা করি মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সাইটে আপনার সরব উপস্থিতি ভবিষ্যত প্রজন্মকে পথ দেখাতে সহায়তা করবে।

আমাদের কথা:
আমরা যারা এই ব্লগটি তৈরি করছি, অংশ নিচ্ছি- তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি, নিতে পারিনি। এটা আমাদের দূর্ভাগ্য যে তখন আমাদের জন্মই হয়নি। হয়তো তবে যুদ্ধ করে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ধন্য হতাম। এখনকার মতো দূর্ভাগা সময়ে বিনা যুদ্ধে প্রতিমূহুর্তে আমাদের মেদিনী বিসর্জন দিতে হতো না।

আমরা সৌভাগ্যবান যে, অন্তত দাবী করতে পারি যারা এই দেশের জন্য লড়াই করেছেন, সেইসব বীরদের আমরা উত্তরসূরী। তাদের পাশে পাশে থেকে থেকে বড় হতে পারছি। আমরা যেমন ঈর্ষা করি আমাদের পূর্বতনদের- যে ইশ্ তোমাদের কত সৌভাগ্য, তোমরা সরাসরি যুদ্ধ করে হানাদারকে হটিয়ে দিতে পেরেছিলে প্রিয় এই বাংলার মাটি থেকে, তেমনি হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদেরকেও ঈর্ষা করবে, বলবে ইশ্ তোমাদের কি সৌভাগ্য তোমরা এই বীরদের হাত পা মাথায় নিয়ে বড় হতে পেরেছো।
কিন্তু তারা যদি আমাদেরকে ঈর্ষা না করে ঘৃণা করে? যদি বলে তোমাদের হাতের সামনে এত এত প্রত্যক্ষদর্শী রেখেও, এত্ত এত প্রমাণ রেখেও তোমরা কি করলে? তোমাদের বাবা ভাইকে যারা হত্যা করেছিলো, তোমাদের মা বোনকে যারা ধর্ষণ করেছিলো তাদের বিচার করতে পারলে না?

তখন সত্যি আমাদের জবাব দেবার কিচ্ছু থাকবে না। লজ্জায় মাথা নুয়ে থাকা ছাড়া।
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের বার্তা পরবর্তী প্রজন্মর কাছে পৌঁছে দেওয়ার মহান দায়িত্ব আমাদের কাঁধে। আমরা সেতুর মতো, অথবা দৌড়বিদের মতো, রিলে রেসের কাঠি হাতে মধ্যবর্তী দৌড়লোক, কি করে এড়াবো এই দায়? নাকি লজ্জার এই দায় নিয়েই মরে যাবো?

না। আমরা এই লজ্জা নিয়ে মরে যেতে চাই না। আমরা জানি আমরা পারবো, পারবোই। এই বাংলার মাটিতে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবোই। সরকার বা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না, আমরা আমাদের চেতনার চেষ্টায় এই বাংলার মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনবো সবটুকু ইতিহাস, সবটুকু প্রমাণ, জমা করে রাখবো এই ব্লগে, হ্যাঁ, এইখানে।সেই প্রমাণ দাখিলে সব অপরাধীর বিচার হবেই হবে।অন্তত বীজটুকু রুয়ে যাবো অন্তরে অন্তরে।

আর এই বাংলার মাটিতে অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের সসন্মানে প্রতিষ্ঠিত করে যাবো।এই আমাদের দৃপ্ত অঙ্গীকার।

আর এই বাংলার, আমাদের এই বাংলাদেশের, এই দুঃখী জাতিটার সমগ্রটা ইতিহাস রচিত করে যাবো আগামী প্রজন্মের জন্য। সত্য বই মিথ্যা ইতিহাস না।আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের স্বাধীনতা... সবটুকু সত্য ইতিহাস এইখানে রেখে যাবো।যেই ইতিহাস কাঁধে নিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বেড়ে উঠবে।
আমরা যারা এই ব্লগে আছি থাকবো, তারা এই শপথ নিয়েই থাকবো।

ধন্যবাদ


লেখাটি ২৭ শে মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৯ সামহোইরইব্লগ ও সচলায়তন এ একযোগে প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28782920



আমি আজ ভেজাবো চোখ সমুদ্র জলে
ও সমুদ্র! কাছে আসো
আমাকে ভালোবাসো
আদরে লুকায়ে রাখো তোমার ওই অঞ্চলে...

দুপুরের কাঠফাটা রৌদ্র... চৈত্রের শেষ দিন ... সুনশান বাতাসের গুনগুনানি... সবুজের পূর্ণতায় ভালোবাসার ছোয়া... দিনান্ত ঘিরে রাখা সুবর্ণ বলয়ে... তবুও অভিমানি মূর্ছণা কোষে কোষে ছড়িয়ে পরে কোন এক গাঢ় অন্ধকারে... বড় কষ্ট অভ্যস্ত অধিকারবোধটুকু ছেড়ে দিতে...

চলে যাবে? ... যাও..
শুধু জানতে ইচ্ছে করে, অধিকার দিলে ক্যান
যদি তা কেড়ে নেবেই একদিন?
জানি, জবাব দেবে না কোন
বোধহয়, উত্তর পাওয়ার অধিকারটিও হারিয়েছি আমি...
তবু, অন্তত এটুকু বলে যাও,
ক্যামন লাগে কাউকে নি:স্ব, রিক্ত, শূন্য ফেলে যেতে?

অধিকার ছেড়ে দেয়ার কষ্ট সয়ে নিতে পারি ঠিকই,
কিন্তু সে অধিকার অন্যজনকে দেবে...
সে কষ্ট কি করে সইবো বলো?


মাঝে মাঝে খুউব জানতে ইচ্ছে করে... তুমি কি আমার জন্য আর্তনাদে ভেঙ্গে পরবে?... কিংবা তোমাকে ছুয়ে যাবে আমার মৃতদেহের প্রতিচ্ছবি? কখনো কি তুমি আমায় খুব অনুভব করবে? প্রবল শুন্যতা কি দগ্ধ করবে.. নাকি, ধুসর স্মৃতী হয়ে যাবো আমি? তুমি কি দিব্যি ভুলে যাবে আমায়?

তোমার যখন খুব দরকার হবে আমাকে ... সত্যকে উপেক্ষা করে নিয়তির কাছে আবারো কি ফিরে চাইবে আমায়? তখন অনাবিল ভালোবাসায় প্রজ্বলিত করবে আমার শেষ কৃত্য? শুধু এইটুকু মনে রেখ... মৃত্যু আলিঙ্গন করার পর ও তোমায় ভালাবাসে যাবো...

আমার রঙীন কতোগুলো দিন
রয়েছে তোমার কাছে- ফিরিয়ে দাও
না হয় আমার হৃদয়ের যে ব্যথা
বুকের মাঝে জমে আছে- ফিরিয়ে নাও
এরপর যাও, চলে যাও, যেখানে যেতে চাও
এরপর যাও, চলে যাও, যেখানে তুমি চাও
আমার রঙীন কতোগুলো দিন
রয়েছে তোমার কাছে- ফিরিয়ে দাও


বি.দ্র.: অনেকের কাছে কৃতজ্ঞতা...


লেখাটি
১৩ ই এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:১৫ সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28787407



২৫শে মার্চ কালরাতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতা শুরু হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বরে স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে তাদের এই নারকীয় তান্ডব শেষ হয়। এই নয় মাসে দেশ তার ৩০ লক্ষ সূর্য সন্তানদের হারায়, ২ লক্ষেরও বেশী মেয়ের সম্ভ্রমহানি আর কোটি মানুষের গৃহহীনতার মধ্য দিয়ে আসে স্বাধীনতার লাল সূর্য। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। নির্বিচারে শিশু ও নারী সহ সাধারণ মানুষ উপর বর্বর নির্যাতন... হত্যা.. গুম চলে পাক হানাদার বহিনীর। শহর ও গ্রামের আনাচে কানাচে এখনো বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হচ্ছে।

তৎকালীন গণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশে বিশেষ করে যুবক ও সংখ্যালঘুদের হত্যার জন্য বেছে নেয়া হতো। যুদ্ধের শেষ দিন ঠিক ১৫ই ডিসেম্বর লেখক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় মৌলবাদ শক্তি, পাকিস্তান আর্মি, আলবদর, আল শামস বাহিনী।

রেহানার শার্ট

আব্দুস সালাম এখনো তার বাবুটার শার্ট আঁক্‌ড়ে ধরে আছেন। ১৯৭১ এ ছোট্ট এই মেয়েটা... রেহানা.. যার বয়স হয়ে ছিল ৪ মাস... যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী জওয়ানদের বুটের আঘাতে দুম্‌ড়ে মুচ্‌ড়ে যায় তার দেহ। এই জামা পরিহিত অবস্থায় রেহানার মৃত্যু হয়। তার একটাই অপরাধ: সে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

রেহানার বাবা আব্দুস সালাম খান ছিলেন খুলনার (সেক্টর-৯) দিঘলিয়া যুদ্ধাঞ্চল এর কমান্ডার যিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। তাকে অনেক দাম দিতে হয়... রেহানা ছিল তার প্রথম সন্তান। বাঙলার আনাচে কানাচে এমন লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে এমন ভাগ্যবরণ করে নিতে হয়। তারা হারায় তাদের মা, বোন, বাবা, ভাই, কোলের শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি হায়নার কবল থেকে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে রেহানার এই জামা

মধুর কেন্টিন:
১৯৫২ সালে যখন তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার “ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা” বলে ঘোষণা দেয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিন থেকে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রথম রেলি বের হয়। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই মধুর কেন্টিন। মধুসূদন দে, মধু দা নামে যার পরিচিতি... যেখান থেকে সকল অন্দোলনের সূচনা... সেই মধুদাকে তার স্ত্রী কন্যা, এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সহ ২৫শে মার্চ ১৯৭১ কাল রাতে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।


মধুদার এবং তার মেয়ের বিয়ের কাপড়


আলতাফ মাহমুদ:
বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হিসেবে আলতাফ মাহমুদের নাম বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার গান আন্দোলনরত মানুষের মনকে উদ্দীপ্ত করত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টার দিতেন এবং তাদের অস্ত্র এবং গোলাবারুদের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। পাকিস্থানী আর্মি তাকে ৩০শে আগষ্ট বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যের জন্য। তার আর কোন হদীস পাওয়া যায়নি।


আলতাফ মাহমুদের ব্যবহৃত তানপুরা


মুসলিম বাজার এবং জল্লাদখানা বধ্যভূমি

১৯৯৯ সালে মিরপুর মুসলিম বাজার মসজিদের সম্প্রসারণের লক্ষে জমি খনন করে নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ শ্রমিকদের মাধ্যমে উদ্ধার হয় মানুষের দেহাবশেষ। বিশেষজ্ঞরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা পরবর্তী দেহাবশেষ বলে নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেখান থেকে ১৭৬৬টি হার উদ্ধার করা হয়। যা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

মিরপুরের একটি পাম্প হাউজ থেকে নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ৫৩৯২টি হার ও ৭০টি মাথার খুলি উদ্ধার করে। যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার দেহাবশেষ বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর সংরক্ষিত জল্লাদ খানার হার ও মাথার খুলি


কৃতজ্ঞতা: মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর।



লেখাটি ২৫ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:২১ সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28782326



যান্ত্রিক নাগরিক জীবনে সপ্তাহের প্রায় প্রতিটা দিন ব্যস্ততায় উইকএন্ডে মানে শুক্রবার মাসুম ভাই তার পুঁচকি প্রিয়ন্তি মামনিটার জন্য বরাদ্ধ রাখেন। দিবসের শুরুতেই প্রিয়ন্তির প্রথম কাজ বসে বসে ক্যালেন্ডারে দাগ কাটা। কবে আসবে শুক্রবার... বাবার কাছ থেকে তার জন্য বরাদ্ধকৃত সময়টুকুর সদ্ব্যবহার। বাবাকে নিয়ে ঘুর'তে বের হওয়া... প্রতিদিন রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একবার বাবাকে জিজ্ঞাসা... "বাবা.. শুক্রবার আসতে তো আর ৬/৫/৪/৩/২/১ দিন বাকি... তাই না?"

এমনি এক শুক্রবার প্রিয়ন্তি কে নিয়ে মাসুম ভাই কোন এক সুনশান বিকেলে বৈকালীন বিনোদনের প্রয়াসে বিনোদিত হৈতে প্রিয়ন্তির বিনোদনের লক্ষ্যে বের হৈছেন। পুচকিটার পেছনে ছোটা ছুটি করেও বাবার কোন অবসাদ লক্ষণীয় নয়। পশ্চিমাকাশে সূর্যের প্রস্থানে অদ্যকার কার্যক্রমের সফল সমাপ্তিতে ঘড়ে ফেরার প্রত্যয়ে নিয়ে ঘোড়াঘুড়ি শেষে একটি সেতু পার হওয়ার নিমেত্তে বাবা কিছুটা সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে মেয়েকে বল্লো,

বাবা: মামনি, আমার হাতটা কি একটু ধরবে, যাতে তুমি নদীতে না পরে যাও?
মেয়ে বলল: না বাবা। তুমি বরং আমার হাতটা ধরো।
(বাবা কিছুটা তব্দা খাইয়া জানতে চাইল)
বাবা: মামনি, পার্থক্যটা কোথায়?
মেয়ে: বাবা, তুমি জাননা? একটা বিশাল পার্থক্য এখানে বিদ্যমান। এই, ধরো আমি তোমার হাত ধরলাম...
বাবা: উমম...
মেয়ে: “এই বুঝি তোমার হতটা ফশকে গেল” ধরনের একটা ভয় আমার মধ্যে কিন্তু পুরোটা সময় জুরেই থাকবে। কিন্তু তুমি যদি আমার হাত টা ধরো? দুনিয়ায় যা ইচ্ছা তাই ঘটুক না কেন... আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত বোধ করব।


লেখাটা আমার প্রিয় মানুষ শওকত হোসেন মাসুম ও তার মামনিটাকে নিয়ে...

লেখাটি
১৩ ই মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১:৪ এ সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28778777

বস্তাবন্দি

Powered By Blogger
Subscribe to Feed