ঠিক এরম সময়ে ... গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা দিনগুলোতো আম-কাঁঠালের সময়.. স্কুল ছুটি থাকত ... তখন অবশ্য সামার ভ্যাকেশন ছিল না .. ছিল আম-কাঁঠালের বন্ধস্কুল ছুটি মানে নানা বাড়ি যাওয়া অবশ্যম্ভাবী... কোন গাছের কোন আমটা পেকেছে.. সব তখন থাকত নখ দর্পণেআর গাছে চড়লেই টারজান টারজান ভাবও চলে আসতগাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে পরার স্মৃতীও ছিল

এমনিতে স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে দুপুরে খাওয়া শেষে আম্মা যখন কানে ধরে বিছানায় পাঠাত ... মন খারাপ করে বিছানায় এপাশ ওপাশ... কখন আম্মার চোখটা বন্ধ হবে... আর ছুটবো টিভির দিকে.... বেলা তিনটার চল্লিশ (সম্ভবত) এ শুরু হতো টারজানসাউন্ড কমিয়ে বোবা ছবি দেখতাম... প্রতিটা ঘটনা... পরের ঘটনা... গাছের ডালে দরি ঝুলিয়ে টারজান হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ... পুকুরের ঘাটলা থেকে টারজানের চিৎকার দিয়ে জাম্প দিয়ে পড়া ... সব কিছুই অনুকরণের চেষ্টা চলত

পরবর্তী সময়ের আরো কিছু কার্টুন জনপ্রিয় ছিলথান্ডার ক্যাটস, নিনজা টার্টেল স্পেল বাইন্ডার, থ্রি স্টুজেস, গার্ল ফ্রম টুমোরো, কজবি শো, সহ বেশি কিছু কিডজ শো

সেই আমলে বাড়ির বড়দের মুখে মুখে আলোচিত হতো সকাল সন্ধ্যা এবং ঢাকায় থাকি সিরিয়াল

সকাল সন্ধ্যা একটি বাংলা ধারাবাহিক নাটকের নাম১৯৮০-র দশকের শুরুতে এটি বিটিভি-তে সম্প্রচার হয়প্রধান চরিত্রে ছিলেন পীযুষ বন্দোপাধ্যায় এবং আফরোজা বানু তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। - বাংলা ইউকিপিডিয়া

এর পরের সময়গুলোতে আরো অনেক নাটক বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়ে ছিল ... বহুব্রীহি, সংশপ্তক, এই সব দিনরাত্রি, কোথাও কেউ নেই, বারো রকমের মানুষ, ইত্যাদিপ্রায় ঈদেই আমজাদ হোসেনের ফানি নাটক জব্বর আলি সিরিজ পাওয়া যেত (সব ঈদে নয়)আনন্দমেলা ছিল ঈদের প্রধান আকর্ষণ এবং যথারীতি নিরানন্দেরতখন এক একটা নাটক ছিল প্রায় এক ঘন্টার আর প্রতি সপ্তাহে নাটক ছিল মাত্র দুটাআর তাই ভাল ভাল নাটকের প্রতিযোগিতা চলত সেই সময়েবর্তমান প্রজন্মের জন্য মায়াই লাগে... তাদের কপালে এইসব আর জুটবে না


সংশপ্তক নাটকে হুমায়ুন ফরিদির এবং ফেরদৌসি মজুমদারের দুর্দান্ত অভিনয়


কোথাও কেউ নেই নাটকে আসাদুজ্জামান নুর সে সময় একটা স্টাইল ক্রিয়েট করেছিলেন... বাইকের চাবিটা একটা চেন এর মাথায় লাগিয়ে হাতের আঙ্গুলে ঘুরানো... যেটা ঢাকার রাস্তায় অনেক কেই দেখা যেতআবার নাটকের শেষ দৃশ্যে তার মৃত্যুর জন্য তো ঢাকা রিতিমত মিছিলএখনো বাকের ভাইয়ের জন্য পুরানা ঢাকায় কুলখানি হয়


আজ রোববার হুমায়ুন আহমেদের আরেকটি ক্রিয়েশনযেখানে তিতলি ভাইয়া, কংকা ভাইয়া... বড় চাচা না কফিনের মধ্যে শুয়ে আছেফানি সব ক্যারেক্টারবহুব্রীহি নাটকটি্ও ফানি নাটক

অয়োময়ের জনপ্রিয়তা আলাদা করে বলার মতআসাদুজ্জামানের অভিনয়ের তুলনা শুধু তিনিই ছিলেন


পরের সময়টায় ... আমরা ছোট পর্দার নায়িকা হিসেবে পাই বিপশা হায়াত.... সমী কায়সার... আর আফসানা মিমিকেবিশেষ করে সমীর ভক্ত ছিলাম ;) ... পরে সমী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ব্যাপক কষ্ট পাই :( ... বিপাশার একটা ইনোসেন্ট লুক ছিল ... সমীর অভিনয় ছিল দুর্দান্ত ... আর আফসানা মিমি? তাকে দেখলেই মনে হতো স্কুল থেকে ফির'ল মাত্র ;)এদের সমসাময়িক ছিলেন বিজরি বরকতুল্লাহ


বিটিভির দাপুটে অভিনেতাদের মধ্যে প্রথমেই আফজালের ক্রেজ ছিল মেয়ে মহলে ;)... হুমায়ুন আহমেদের দুর্দান্ত অভিনয়ের মাঝেও আসাদুজ্জামান নুরের অবস্থান ছিল স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিততখন মেঘনা নামের একজন টিভি নায়িকা ছিলযিনি এখন আর টিভিতে আসেন নাআর বিশেষ ভাবে ছিলেন সুবর্না মুস্তাফাআলি যাকের .. সারা যাকের... আবুল হায়াত... আবুল খায়ের... পীযুষ... আসাদ ... খালেদ খানদের অভিনয় ছিল সত্যি দেখার মত


এর পর আসে তৌকির একটা এডিক্টেড নাটকের নায়ক হওয়ার সুবাদে তাকে সব সময় তাই মনে হতজাহিদ হাসানতো পুরা মফিজ টাইপ ;) (এটাও নাটকের সুবাদে), আজিজুল হাকিম ছিলেন চিরসবুজ... তার আরো একটি নাম ছিল .. প্যাকেজুল হাকিম ;), শহীদুজ্জামান সেলিমদের যুগ

(
চলবে)


লেখাটি বাধভাঙার আওয়াজে প্রকাশিত

0 Comments:

Post a Comment