ঈদ-উল-আযহার ঠিক পরের দিন যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের। এক দোস্ত কইলো ২টা দিন সময় পাইলে আরো কিছু টাকা এরেঞ্জ কইরা দিতারে। একটা পরিবারকে দাড় করানোর সমপরিমান টাকাও যোগার মন্দ কি? এই ভাবনায় ঈদ এর পরদিন আর যাওয়া হলোনা। ভালোই হইলো। গায়ে হাওয়া লাগাইয়া চুটাইয়া আড্ডাবাজী করলাম ঈদ এর পুরা ছুটিতে

ফাইনাল হলো আমি, নজরুল ভাই, রনি রাব্বি যাবো। ইতিমধ্যে শিশির এর কল্যানে ক্যাপ্টেন হায়দার এর সাথে যোগাযোগ হলো। চললো একনাগারে ফোনাফুনি। কি করতে চাই এবং কি করা উচি ... সব কিছু। অবশেষে প্রোগ্রাম ফাইনাল। এর মধ্যে ঘটলো দূর্ঘটনা। নৈঋত অসুস্থ... নজরুল ভাইকে নেয়া যাবে না। যদিও তার শেষ মুহুর্তে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। ওইদিকে রাব্বির জন্ডিস ধরা পরলো। হা... হা... হা... হা... ভালো ঝামেলায় পরা গেল না? এর মধ্যে জনি আইসা জুটলো যাওয়ার জন্য। রিয়াদ ভাই যাইতে চাইছিলেন। কিন্তু অফিসের ঝামেলায় ক্ষান্ত দিতে হৈলো অবশেষে ডিসেম্বর রাত ১০টায় বাস এর ঈগল পরিবহনের ৩টা টিকেট কাটা হলো। রনি গুলিস্তান এর বাটার ফ্লাই সেলাই মেশিন এর দোকান থেকে ৪টা সেলাই মেশিন নিয়ে সরাসরি বাস কাউন্টারে হাজির হলো। এরি মধ্যে আমি চিকনে খান ইমোটিল খাইয়া লইলাম... যাতে ঢাকায় ফেরত আসার আগ পর্যন্ত কোন চাপ পরতে না হয়... :p

শুরু হলো অপারেশন সিডর। আমি, জনি আর রনি। আপনাদের প্রদানকৃত টাকা পকেট ভর্তি করে চল্লাম। কলাবাগান বাস কাউন্টার থেকে রাত ১০টায় আমাদের যাত্রা। গাবতলি কাউন্টারে ফাইনাল যাত্রা বিরতি। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতে পারিনি। ভুউউউ... পুউউউউ.. .. .. ফেরির হর্ণ ... ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগেই আগে পকেট চেক করলাম। টাকা পয়সা ঠিক আছে কিনা। নাহ সব ঠিক। একটু হাটাহাটির জন্য ফেরিতে নেমেতো পুরা টাশকি। কনকনে ঠান্ডা.. দ্রুত একটা বিড়ি ফুকে আবার বাস ফেরত এলাম। আবার শুরু হলো যাত্রা। খুলনা হয়ে বাস আমাদের নামালো বাগেরহাট বাস স্ট্যান্ড

বাগের হাট ষাট গম্বুজ মসজীদ

কনকনে শীত ... চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এত রাতে কোথায় যাই? মাই গড!!! সকালতো সাড়ে টা বাজে অথচ মনে হচ্ছে এখন রাত রাস্তায় কোনমানুষ জন নেই ... নেই আলোর দেখা কি করা যায় সেলাই মেশিন গুলোর পাহারায় থাকলাম আমি আর রনি এবং জনিকে পাঠালাম কোন হোটেল পওয়া যায়কিনা খোজার জন্য

নাহ.. ম্যানেজার ঘুমাচ্ছে ঘন্টাখানিক পর যোগাযোগ করতে বলল্লো কি করা .. .. এর মধ্যে জনি খোজ বের করলো যে পাশেই আশার জেলা কার্যালয় অবশেষেউঠলাম জেলা অফিসের গেস্ট রুম ফ্রেস হয়ে ক্যাপ্টেন হায়দারকে ফোনাইলাম জানালো ১০টায় আমাদের পিক করবে ইতিমধ্যে সকালের নাস্তা শেষ করেঢাকায় ফেরতের টিকেট সেড়ে আমাদের জেলা অফিসে ফিরে অপেক্ষায় থাকলাম ক্যাপ্টেন হায়দার এর গাড়ির

222.JPG

মোড়লগঞ্জ ফেরি পারাপার

১১:০০ মোড়ল গঞ্জের উদ্দেশ্যে আবার আমরা ছুটলাম ১২:৩০ পৌছলাম মোড়ল গঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়- পৌছে জানাগেল ক্যাপ্টেন হায়দার আরএকটা রিলিফ কার্যক্রম উদ্ভোধন এর জন্য ঘন্টাখানেক এর জন্য যেতে হবে চারিদিকে ঘুড়ে স্থানীয় মানুষদের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেল সিডর এরভয়াবহতা কেউ আর সেই বিভিষিকাময় সময় এর কথা মনে করতে চায় না

333.jpg

মোড়ল গঞ্জ পাইলট হাইস্কুল


:৩০ তে ফিরলো ক্যাপ্টেন হায়দার এদিকে স্থানীয় দুজন সাংবাদিক উপস্থিত কথা হলো তাদের সাথে কথা হলো স্থানীয় ভাবে সেনাবাহিনীর ত্রান কার্যক্রমেরছোট্ট একটা ধারণা পাওয়া গেল

2148565206_5fd0679596.jpg




একমাস হয়ে গেল। বিপর্যস্ত জনজীবনের প্রাণ একটু একটু করে সঞ্চার হচ্ছে। মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে স্বজন হারানোর ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দ। গৃহহারা মানুষগুলো একটু একটু করে আবার বুনছে নতুন স্বপ্ন। নতুন ঘড়। নতুন সংসার।

আচ্ছা বলুন তো স্মরণকালে প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ গুলোর জন্য কি করা যায়? ভাবতে বসেই যেটা খেয়াল হলো ... সব্বাই তো ইন্সট্যান্ট ত্রান নিয়ে যাচ্ছে... বিলিয়ে দিয়ে আসছে.. কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কিছু ভাবতেছে না। এইরম ভাবনা ধেকেই আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্পৃক্ততা।

আপনারা আগেই যে হেল্প টা করেছেন তা প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রুপ থেকে সামহোয়ারইন এর মাধ্যমে ইনস্ট্যান্ট সহায়তায় স্মরণখোলায় পৌছানো হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম ছিলো এবি একক কার্যক্রম। কিছু সর্বস্ব হারানো সহায় সম্বলহীন মানুষকে আবার ঘুরে দাড় করিয়ে দেয়ার একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন তুলে দেয়া বাগের হাটের মোড়ল গঞ্জ এলাকার মো: ইউনুস, মো: ফারুক, সহিদুল ইসলাম, মোশাররফ, আলি আশ্রাফ, মো: মানিক সর্দার ইউনুছ হাওলাদার, সহিদুল ইসলাম, সাত্তার খান, নাছিমা বেগম, বকুল বেগম, আসমা আক্তার, ফারুক শেখ চোখে। আপনাদের এই বাড়িয়ে দেয়া সহযোগীতার হাত আবার তাদের ঘুড়ে দাড়ানোর কঠিন সংকল্পে আবদ্ধ করলো। মোড়ল গঞ্জের হাটে বাজারে চলবে আপনাদের সহযোগীতায় নির্মিত ভ্যান গাড়ী... মানুষ জন সেলাই কাজের জন্য ছুটবে আপনাদের সহযোগীতায় প্রদানকৃত সেলাই দিদি মনির বাড়িতে।

044.jpg

sidr2.jpg

আগে থেকেই অর্ডার করে বানানো সাতটি ভ্যান যথাক্রমে ইউনুস, মো: ফারুক, সহিদুল ইসলাম, মোশাররফ, আলি আশ্রাফ, মো: মানিক সর্দার ইউনুছ হাওলাদার এর হাতে তুলে দেয়া হয়। ইশশ... মানুষগুলোর চোখ মুখ খুশিতে চিক চিক করতে ছিলো। সে এক স্মরণীয় মুহুর্ত। কেউ কখনো ভাবেনি তারা আবার ঘুড়ে দাড়াতে পারবে। তাদের চোখ ছিলো আবার বেচে উঠার ঘুড়ে দাড়ানোর আলোক শিখা।

066.jpg

সাথে করে নিয়ে যাওয়া সেলাই মেশিন যথাক্রমে নাছিমা বেগম, বকুল বেগম, আসমা আক্তার ফারুখ এর হাতে বুঝিয়ে দেয়ার পর সহিদুল ইসলাম এবং সাত্তার খান এর মুরগীর খামার ভিজিট করে তাদের ,০০০ টাকা করে মোট ১৬,০০০ টাকার মুরগীর বাচ্চার বন্দোবস্ত করা হলো

sidr3.jpg

ভুপেন হাজারিকার একটা গান ছিলো...

মানুষ মানুষের জন্য...জীবন জীবনের জন্য

একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারে না

বল কি তোমার ক্ষতি... জীবনের অথৈ নদী

পার হয় তোমাকে ধরে... দুর্বল মানুষ যদি

জীবনের এই অথৈ নদী পার হওয়ার জন্য স্বজন হারানো ... সর্বস্ব হারানো ... দুর্যোগ কবলিত মানুষগুলোর জন্য আপনাদের কাছে আমার একটা মেইলেবলেছিলাম..

দূর্যোগ কবলিত এই মানুষগুলো আমাদের- কারো ভাই.. .. কারো বোন.. .. কারো বাবা.. কারো মা.. আমরা ছাড়া তাদের আর কে আছে বলুন? /৫০/১০০যার যতটুকু সামর্থ আছে সেইটুকু নিয়েই না হয় আপনার হাতটা বাড়িয়ে দিন .. প্লিজ.. .. এই দেশটাতো আমাদেরই... চলুন না একটু অল্প খেয়ে সবাই এক সাথেবাঁচি...

আপনারা নিরাশ করেননি যার যার অবস্থান থেকে আপনাদের সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত করেছেন হয়তো অনেক কিছুই আমরা করতে পারিনাই যতটুকুই বা করেছি তাইবা কম কিসে? আপনাদের বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরেই আজ ১৪টা পরিবার ঘুড়ে দাড়াতে সক্ষম হয়েছে এর পুরো কৃতিত্বটা আমি আপনাদের দিব কারণ টাকা না দিলে আমি, রনি বা জনি যেখানেই যেতাম তাতে কোন লাভ হতো না মূলত প্রয়োজন ছিলো টাকার আর সেটা আপ্নারা আমাদের যোগান দিয়েছেন এভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের সহযোগীতার সক্ষমতা আমরা অর্জন করব ইনশাল্লাহ

যাদের সহায়তায় দূর্গত মানুষগুলো আবার তাদের স্বপ্ন ফিরে পেল:

নজরুল ভাই, তার নিউইয়র্ক প্রবাসী ভাগ্নি মনি তার হাবি, নজরুল ভাই-এর মেজদা বন্ধুদের কাছ থেকে মোট ২৪ হাজার টাকার ফান্ড কালেক্ট করে দিয়েছেআরো আছে তার বন্ধু শাহীদা আরবি সে তার ঈদের জামা না কিইনা সেই টাকাটা যেন আমাদের ফান্ডে দিছে

ওই দিকে সুদুর ডালাস থেকে মেহেদিকে যে এবি যে কোন কার্যক্রমে তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় সবসময় আমার পাশে পাই অস্ট্রেলিয়া থেকে ববি এবংশাতিল মিথিলাকে... যারা আমার এই সকল বিরক্ত হাসিমুখে মেনে নেয় আর দেশ থেকে যাদের সব সময় কস্ট দেই তারা হলেন নন্দিতা, ফাহিম, নাজ, রাব্বি, ফাহমিদা, সজিব, সুমন, হায়দার ভাই, রিয়াদ ভাই, জয়, ভাস্করদা মৌসুম এবং গ্রুপের বাইরের আমার বন্ধু নাহিদ, জিয়া, তুহিন রোজী এছাড়াও যাদেরকাছে কৃতজ্ঞ তারা হলেন, স্বাতী, জনি, পুতুল, মিশু, হায়দার সহ অনেকেই... আমার বন্ধু ইমন, রাব্বি আরো কিছু মানুষ কাপর রেডি করে রেখেছিলো কিন্তুস্বল্পতার কারনে এই কাপর গুলো সিডর বিধ্বস্ত এলাকায় পৌছাতে পারি নাই তবে এবার শীত বস্র বিতরণে এই কাপর গুলো দিয়ে এবং আরো কিছু সংগ্রহ করেএই কার্যক্রমকে স্বার্থকতা দিবে ইনশাল্লাহ

আপনাদের সকলকে জানাই লাল সালাম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা থাকবে আপনাদের জন্য সব সময় আপনাদের জীবনের সার্বিকসফলতা কামনা করছি আপনাদের এই মহানুভবতা দূর্যোগ কবলিত মানুষগুলোর মুখে আবার হাসি ফিরিয়ে দিল এবি বাসি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ সেই সকলমানুষগুলোও আজ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ যেই হাসিটা আপনারা আজ তাদের মুখে ফিরিয়ে দিলেন তা আসলে কোন টাকা দিয়ে কেনা যাবে না...

[ কারো নাম ভুলক্রম বাদ পড়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি ]

শেষ হলো ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম এবার দুপুরের খাওয়া দাওয়া। হা.. হা.. হা.. বিশাল এক ভোজন কার্যক্রম। ক্যাপ্টেন হায়দার এর বদৌলতে বিশা আয়োজন। উফফ মাছ ভর্তাটা যা হয়েছিলো না.. আমার ওই ভর্তাটা খাওয়ার জন্যই আবার যেতে ইচ্ছা করছে। মুরগির রেজালা, মাছের ঝোল, বেগুন ভর্তা গুড়া মাছের চচ্চরী.. .. আর বলা যাবে না।

সব শেষে বিদায় .. .. স্বল্প সময়ে ক্যাপ্টেন হায়দারের আতিথেয়তায় আমরা যারপর নাই মুগ্ধ এর জন্য অবশ্যই একটা বিশাল ধন্যবাদ পাবে ক্যাপ্টেন হায়দার সেই সাথে শিশির যে কিনা হায়দার-এর সাথে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিল ধন্যবাদ জানাই সেনাবহিনীর সকল সদস্যকে যারা ওইদিন আমাদের কোম্পানীদিয়েছেন ধন্যবাদ জানাই তাদের যারা আমাদের সহযোগীতা গ্রহণ করেছেন ধন্যবাদ জানাই সেই সকল সাংবাদিকদের যারা কষ্ট করে আমাদের সংবাদ সংগ্রহকরে স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছেন

ভালো থাকুন সব্বাই

099.jpg

444.jpg

08.jpg01.jpg

\02.jpg03.jpg

04.jpg05.jpg

06.jpg

Photo_01.jpg

Photo_03.jpg

Photo_02.jpg

0 Comments:

Post a Comment