২৫শে মার্চ কালরাতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতা শুরু হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বরে স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে তাদের এই নারকীয় তান্ডব শেষ হয়। এই নয় মাসে দেশ তার ৩০ লক্ষ সূর্য সন্তানদের হারায়, ২ লক্ষেরও বেশী মেয়ের সম্ভ্রমহানি আর কোটি মানুষের গৃহহীনতার মধ্য দিয়ে আসে স্বাধীনতার লাল সূর্য। এটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। নির্বিচারে শিশু ও নারী সহ সাধারণ মানুষ উপর বর্বর নির্যাতন... হত্যা.. গুম চলে পাক হানাদার বহিনীর। শহর ও গ্রামের আনাচে কানাচে এখনো বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হচ্ছে।
তৎকালীন গণতান্ত্রিক শক্তির বিনাশে বিশেষ করে যুবক ও সংখ্যালঘুদের হত্যার জন্য বেছে নেয়া হতো। যুদ্ধের শেষ দিন ঠিক ১৫ই ডিসেম্বর লেখক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় মৌলবাদ শক্তি, পাকিস্তান আর্মি, আলবদর, আল শামস বাহিনী।
রেহানার শার্ট
আব্দুস সালাম এখনো তার বাবুটার শার্ট আঁক্ড়ে ধরে আছেন। ১৯৭১ এ ছোট্ট এই মেয়েটা... রেহানা.. যার বয়স হয়ে ছিল ৪ মাস... যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী জওয়ানদের বুটের আঘাতে দুম্ড়ে মুচ্ড়ে যায় তার দেহ। এই জামা পরিহিত অবস্থায় রেহানার মৃত্যু হয়। তার একটাই অপরাধ: সে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
রেহানার বাবা আব্দুস সালাম খান ছিলেন খুলনার (সেক্টর-৯) দিঘলিয়া যুদ্ধাঞ্চল এর কমান্ডার যিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। তাকে অনেক দাম দিতে হয়... রেহানা ছিল তার প্রথম সন্তান। বাঙলার আনাচে কানাচে এমন লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাকে এমন ভাগ্যবরণ করে নিতে হয়। তারা হারায় তাদের মা, বোন, বাবা, ভাই, কোলের শিশু পর্যন্ত রেহাই পায়নি হায়নার কবল থেকে।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে রেহানার এই জামা
মধুর কেন্টিন:
১৯৫২ সালে যখন তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার “ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা” বলে ঘোষণা দেয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিন থেকে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রথম রেলি বের হয়। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই মধুর কেন্টিন। মধুসূদন দে, মধু দা নামে যার পরিচিতি... যেখান থেকে সকল অন্দোলনের সূচনা... সেই মধুদাকে তার স্ত্রী কন্যা, এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সহ ২৫শে মার্চ ১৯৭১ কাল রাতে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।
মধুদার এবং তার মেয়ের বিয়ের কাপড়
আলতাফ মাহমুদ:
বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হিসেবে আলতাফ মাহমুদের নাম বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার গান আন্দোলনরত মানুষের মনকে উদ্দীপ্ত করত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের শেল্টার দিতেন এবং তাদের অস্ত্র এবং গোলাবারুদের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। পাকিস্থানী আর্মি তাকে ৩০শে আগষ্ট বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যের জন্য। তার আর কোন হদীস পাওয়া যায়নি।
আলতাফ মাহমুদের ব্যবহৃত তানপুরা
মুসলিম বাজার এবং জল্লাদখানা বধ্যভূমি
১৯৯৯ সালে মিরপুর মুসলিম বাজার মসজিদের সম্প্রসারণের লক্ষে জমি খনন করে নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ শ্রমিকদের মাধ্যমে উদ্ধার হয় মানুষের দেহাবশেষ। বিশেষজ্ঞরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা পরবর্তী দেহাবশেষ বলে নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেখান থেকে ১৭৬৬টি হার উদ্ধার করা হয়। যা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মিরপুরের একটি পাম্প হাউজ থেকে নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ৫৩৯২টি হার ও ৭০টি মাথার খুলি উদ্ধার করে। যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার দেহাবশেষ বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করে।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর সংরক্ষিত জল্লাদ খানার হার ও মাথার খুলি
কৃতজ্ঞতা: মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর।
লেখাটি ২৫ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:২১ সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28782326
0 Comments:
Subscribe to:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
বস্তাবন্দি
-
►
2009
(13)
- ► ফেব্রুয়ারী (1)
-
▼
2008
(24)
-
▼
মে
(11)
- আমাকে ভোলার অহংকারে তুমি কতোবার ওল্টাবে ঠোঁট ?
- আমার মায়ের সাতটি মিথ্যা কথা
- প্রতিদিন মা দিবস...
- মেয়ে .. শুধু সময়টা ভুলে যাও..
- ভালবাসা.... আসলে কি? ক্যামন হওয়া উচিত..
- নষ্টালজিয়া...
- শুভ নববর্ষ... ১৪১৫
- www.bangladesh1971.net এর পথচলা
- আমি আজ ভেজাবো চোখ সমুদ্র জলে
- মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১... কয়েকটি খন্ডচিত্র...
- মাসুম ভাই ও তার প্রিয়ন্তি মামনি’র গল্প...
- ► ফেব্রুয়ারী (1)
-
▼
মে
(11)
Categories
- আমার দিনকাল (2)
- বর্ষা (2)
- বসন্ত (1)
- বৃষ্টি (2)
- ভালবাসা দিবস (1)
- মজারু (2)
- মানবতা (1)
- শরৎ কাল (1)
- সংগ্রহশালা (2)
- স্মৃতিচারণ (2)