লেখাটি মা দিবসকে নিয়ে লিখেছিলাম... প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের বহুল জনপ্রীয় ব্লগ সামহোয়ারইনব্লগ এ (http://www.somewhereinblog.net)। আমি এই ব্লগ এ প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নামে পরিচিত। এটি আমার জীবনের সবচাইতে বহুল পাঠক প্রিয় পোস্ট। লেখাটি http://www.priyoaustralia.com.au/ সাইটে ২০০৮ সালের মা দিবসের শ্রেষ্ট লিখা বিবেচিত হয়েছে (লেখাটির লিংক: http://www.priyoaustralia.com.au/index.php?news=12333)।

গল্পের শুরুটা ছিল শৈশব দিয়ে। যখন আমি ছোট.. দরিদ্রতার মধ্যে আমাদের বসবাস... পর্যাপ্ত খাওয়া জুটছিল না। যখন কিছু খাদ্যের সংস্থান হয় তখন মা আমাকে তার অংশটুকুও আমাকে দিয়ে বলত.. “আমার ক্ষুধা নেই”। এটা ছিল আমার মা এর প্রথম মিথ্যা কথা

বাড়ন্ত সময়ে, মা সন্তানের পুষ্টিমানে এর কথা বিবেচনা করে আমার জন্য মাছ রান্নার চেষ্টা করতেন। একদিন মা আমার তিনটে মাছ রান্না করলেন... কারণ আমার পরিবার এর সামর্থের বিচারে এটাই অনেক। তো, একটা মাছ বাবাকে দেয়া হলো.. আর দুটা আমাকে। আমি একটা মাছ মাকে দিতে গেলাম.. মা নিতে চাইল না। বলল... তোমার এখন বেশী বেশী মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আর আমার আসলে মাছ খুব একটা ভালও লাগে না। এটা ছিল আমার মা এর দ্বিতীয় মিথ্যা কথা

আমার লেখাপড়ার জন্য মা কাজ করছে... এক রাতে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে.. মাকে বললাম.. “মা, তুমি ঘুমাচ্ছ না কেন? কাল তো আবার তোমার কাজে যেতে হবে।”... মা আমাকে বলল.. “বাবা, তুই ঘুমা... আমি আজ টায়ার্ড না”। আসলে তখন আমার স্কুলের সেশন ফি দেয়ার সময় ছিল। আর এই দুশ্চিন্তায় আমার মা’এর চোখে ঘুম ছিল না। এটা ছিল আমার মা এর তৃতীয় মিথ্যা কথা

আমার এসএসসি পরীক্ষার সময়... মা আমার সঙ্গে গিয়েছেন। পুরোটা সময় রোদ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছেন তার সন্তানের জন্য। বেল বাজার পর আমি মায়ের সাথে মিলিত হলাম। মা ফ্লাক্সে ভরে আমার জন্য গরম দুধ সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। দুধটুকু অবশ্যই আমার মায়ের ভালবাসার চাইতে বেশী ছিল না। এতক্ষণে খেয়াল হলো মা ঘামে ভিজে জবজবে.. আমি কিছুটা খেয়ে মাকে বাকিটা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম... মা বলল.. “বাবা... আমি তৃষ্ণার্ত নই”। এটা ছিল আমার মা এর চতুর্থ মিথ্যা কথা

লেখাপড়া সমাপ্তির পর যখন আমি চাকরিতে জয়েন করলাম। আমার বৃদ্ধ মা কে অবসর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করালাম। মা রাজী হলো না। মাকে কোন টাকা দিলেও তা সাথে সাথে ফেরত দিত... বলত আমার পর্যাপ্ত টাকা আছে। এটা আমার মা এর পঞ্চম মিথ্যা কথা

স্নাতকোত্তর লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর যখন একটি হ্যান্ডসাম স্যালারীর চাকরির অফার গ্রহণ করি... এবং মাকে সাথে রাখতে চাই... আমার মা বলে “এরকম উচ্চতর জীবন যাপনে আমি অভ্যস্ত নই”। এটা ছিল আমার মা’র ষষ্ঠ মিথ্যা কথা

আমার মা যখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী... তখন আমি মা’র কাছ থেকে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছিলাম। আমি দ্রুত বাড়ি ফিরে হাসপাতালে মায়ের কাছে গেলাম। অপারেশনের কারণে তিনি ছিলেন বিছানায় শয্যাশায়ী। মা আমার আমায় দেখে অনেক কষ্টে হাসলেন। কিন্তু এটা ছিল আমার কাছে অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। কজ, মা আমার বিছানায় রোগ শোকে ক্ষীণ, শীর্ণ হয়ে পড়েছেন। মা আমায় বলছিলেন “বাবা, কাঁদে না... আমার কোন ব্যথা নেই তো”। এটা ছিল আমার মা’র সপ্তম মিথ্যা

যে মা আমাকে দিয়েছে দুনিয়া দেখার অধিকার... যিনি নিজে কেঁদে আমাকে কান্না স্পর্শ করতে দেন নি... যার চোখে সব সময় দেখেছি ভালবাসার আলোকচ্ছটা... সেই স্বর্ণ হৃদয়ের মা.. আজ সে ক্ষীণ শীর্ণ, রোগ শোকে কাতর।

বন্ধুরা.. মা’কে ভালবাস। জীবনের সকল ভালবাসা মা’র জন্য উত্সর্গ করলাম। মা তোমায় ভালবাসি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে। ভাল থাক আমার মা জননী।



একটা চেইন মেইল এর থিম অনুরন করে লিখা


লেখাটি ১২ ই মে, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩ তারিখে সামহোয়ারইনব্লগ এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/prottublog/28797003

0 Comments:

Post a Comment



বস্তাবন্দি

Powered By Blogger
Subscribe to Feed